সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২৬ পূর্বাহ্ন
শফিকুল ইসলাম ইরান, বেতাগী॥ বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা বরগুনার বেতাগী উপজেলার বিষখালী নদীর তীব্র ভাঙনে পাল্টে যাচ্ছে বেতাগীর মানচিত্র। বেতাগীর বন্দর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঐতিহ্যবাহী কাঠবাজার, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শত বছরের পুরনো কালীমন্দির ও শ্মশানঘাট, ডাকবাংলো, ঝোপখালী গ্রাম, পুরনো থানাপাড়া, কেওড়াবুনিয়া, ছোট মোকামিয়াসহ বিষখালী নদীর অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মুখে ১০ হাজার পরিবার।
বিষখালী নদীর তীব্র ভাঙন থেকে বেতাগী উপজেলাকে রক্ষা করতে ২০১৭ সালের ২০ মে বেতাগী পৌর শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেক এ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং একটি প্রকল্প অনুমোদন করেন বলে জানা যায়।
একটানা ৩ বছর অতিক্রম হলেও এটি কেবল শুধুই কাগজে-কলমে দেখা যায় ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে শোনা যায়- বাস্তবে এ প্রকল্পের কোনো দেখাই নেই। বাস্তবে ছিল শুধু শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর। এখন সেটিও ভাঙনের মুখে পড়ে বিষখালী নদীগর্ভে বিলীনের পথে।
প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটারব্যাপী বাঁধ ভাঙনের কবলে পাল্টে যাচ্ছে বেতাগীর মানচিত্র। ভাঙনকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিষখালী নদীর পশ্চিম দিকে ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলা, পূর্বদিকে বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা অবস্থিত। উত্তরে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদী ও বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর সঙ্গে প্রবহমান।
দক্ষিণে বলেশ্বর ও পায়রা নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে প্রবাহিত হয়েছে। নদীর স্রোত দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুরনো থানাপাড়ার বিপরীত দিকে চর জেগে উঠায় নদীর স্রোত পরিবর্তিত হয়ে পূর্বদিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ভেঙে যাচ্ছে বেতাগীর এ জনপদ।
বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। গত বছর বর্ষা মৌসুমে ঝোপখালী গ্রামের শতাধিক পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে। বেতাগীর ঐতিহ্যবাহী একমাত্র কাঠবাজারের অর্ধেকের বেশি দোকান ও স’ মিল বিষখালী নদীর করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে গেছে।
এখান থেকে কাঠ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে। নৌপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকার কারণে দক্ষিণের জনপদের স্বরূপকাঠি, রাজাপুর, কাঁঠালিয়া, বামনা, বদনীখালী, নিয়ামতি, চামটা, বরগুনা, ঝালকাঠি ও বরিশালের বিভিন্ন স্থানে কাঠ বিক্রি হচ্ছে।
কাঠবাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও দোকান মালিক অধ্যক্ষ মো. রফিকুল আমিন বলেন, শিগগিরই বন্দর রক্ষা তথা কাঠবাজার রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার, তা হলে নদীতে যেভাবে ভাঙন দেখা যাচ্ছে ২-১ বছরের মধ্যে কাঠবাজারের অস্তিত্ব কিছুই থাকবে না।
শত বছরের পুরনো বেতাগীর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী কালীমন্দির আর কিছু দিনের মধ্যে বিষখালী নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি পরেশ চন্দ্র কর্মকার বলেন, বেতাগী বন্দর অতি পুরাতন। এ বন্দরের কালীমন্দির ও শ্মশানঘাটকে রক্ষার জন্য সরকারের জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দা সমাজসেবক আবদুস সোবাহান বলেন, আমরা অরক্ষিত অবস্থায় আছি। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে যদি বর্ষা মৌসুমের মধ্যে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তাহলে বন্দরের অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে।
বেতাগী পৌরসভার মেয়র এবিএম গোলাম কবির বলেন, নানা জটিলতায় বেতাগী শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পটি আটকে ছিল। ইতোমধ্যে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই তারা একটি প্রকল্প তৈরি করবেন। আমরা চেষ্টা করব শহর রক্ষা বাঁধের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে।
বেতাগী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মাকসুদুর রহমান ফোরকান বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বেতাগী বিষখালী নদীর ভাঙন বন্ধ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। অতি শিগগিরই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
Leave a Reply